শিরোনাম

জনসার্বভৌমত্ব রক্ষায় বঙ্গবন্ধুর দর্শনের বিকল্প নেই

প্রকাশনার সময়: ১৭ এপ্রিল ২০২২, ০২:০২ পূর্বাহ্ন

বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক কাউটে লিও নিকোলায়েভিচ তলস্তয় ‘আন্না কারেনিনা’ উপন্যাসের শুরুতে লিখেছেন ‘অবলোনস্কিয় পরিবারের সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেল।’ বাক্যটি সংক্ষিপ্ত, কিন্তু বিশাল অর্থবহুল। আন্না কারেনিনা উপন্যাসে তলস্তয় সমাজ সমালোচনা পরিবার দিয়ে শুরু করলেও তা স্পর্শ করেছে সমাজ ও রাষ্ট্রের জনজীবনেরই অচ্ছেদ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো। 

বিশ্বমানচিত্রে বাংলা, বাঙালির অস্তিত্ব ও জাতিসত্তার বিকাশে সীমাহীন ত্যাগ, তিতিক্ষা ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে বৈশ্বিক করোনা সংকটে যখন স্বল্পপরিসরে উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে সমগ্র জাতি সুদৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই রাষ্ট্রীয় মূলনীতির দর্শন ও জনসার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করেছে ধর্মের নামে লেবাসধারী সুবিধাভোগী প্রতিক্রিয়াশীলচক্র। 

১৯৭৫-এর কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পটপরিবর্তনের সুযোগে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্র বিশেষ করে রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সর্বত্র একটি সুবিধাভোগী গ্রুপ বা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এই সিন্ডিকেট গোষ্ঠীর বেপরোয়া আচরণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ নামক বৃহত্তর পরিবারের সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছে। 

এই এলোমেলো অবস্থা থেকে উত্তরণে তথা জনজীবনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে জনসার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিচার-বিশ্লেষণ আজ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। ইতিহাসের দায়শোধ ও আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আমাদের ব্যর্থতা ও সীমাবদ্ধতার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এগিয়ে যেতে হবে।

সর্বজনীন মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে যে কোনো রাষ্ট্র বা সমাজ টিকে থাকে। এই মূল্যবোধের মূল ভিত্তি হলো ওই সমাজ বা রাষ্ট্রে বসবাসরত মানুষের জীবনাচরণের আনুষঙ্গিক উপকরণ। যা মানুষকে সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা জোগায়। আবহমানকাল ধরে এমনি অভিন্ন জীবনাচরণ বঙ্গদেশীয় সমাজ-সংস্কৃতিতে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। হাজার বছরের নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠী, নানান শ্রেণির মিলন, পারস্পরিক প্রভাব ও সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে বঙ্গীয় সেই সংস্কৃতি। বহু শতাব্দী ধরে ধর্মীয়, সাহিত্য, সংগীত, ললিতকলা, ক্রীড়ার সর্বজনীন প্রভাবের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের জ্ঞান, আচার-আচরণ, বিশ্বাস, রীতিনীতি, নীতিবোধ বিকশিত হয়েছে। 

এরই আঙ্গিকে গড়ে উঠেছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক অর্জিত কীর্তিসমূহের প্রভাবের ওপর ভিত্তি করে সমাজব্যবস্থার সর্বজনীনতা লাভ করেছে। আর্য, সেন, তুর্কি, পর্তুগাল, মোগল, ইংরেজ, ফরাসি শাসক প্রভাবিত ধর্ম, দর্শন, ধারণা, সাংস্কৃতিক ধারা বা শাসন কাঠামো যা কিছু বঙ্গীয় অঞ্চলে এসেছে, তা স্বল্পসময়ের মধ্যে বঙ্গীয় চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। লাভ করেছে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। 

লক্ষ করা যায়, বৈদিক, বৌদ্ধ, জৈন, ইসলাম ধর্মের উৎপত্তিস্থল বঙ্গীয় অঞ্চল থেকে বহু দূর হওয়া সত্ত্বেও কোনো ধর্মের আদি বা অকৃত্রিম রূপ এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। বরং এসব ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে স্থানীয় ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচরণের সমন্বয় ঘটেছে। এ সর্বজনীন আচারবোধের কারণে বঙ্গদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মাঝে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও সামাজিক রীতিনীতির অপূর্ব মিলন লক্ষ করা যায়। ব্রিটিশ ও তৎপরবর্তী পাকিস্তান উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী শাসনকার্যের স্থায়িত্বের তাগাদা থেকে বাঙালির চিরাচরিত সর্বজনীন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের মধ্যে ফাটল ধরানোর কৌশলের আশ্রয় নেয়। 

তারা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আচরণে বিভাজিত রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করতে গিয়ে সমাজ-রাষ্ট্রে এক ধরনের ধর্মীয় উন্মাদনার বিস্তার ঘটায়। মানুষে মানুষে মানবিক, সামাজিক হূদ্যতার জায়গা দখল করে নিতে থাকে ধর্মীয় বিভাজন। এই বিভাজন অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এবং ধর্মীয় সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সর্বজনীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। রাজনীতি, সমাজদর্শন, ধর্মীয় উপাসনালয়, সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় উন্মাদনার প্রভাব বাঙালির সর্বজনীন মূল্যাবোধ নষ্ট করে দেয়। 

১৯৭১ সালে স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে মুক্তিসংগ্রামের প্রতিশ্রুতির মধ্যে রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে সর্বজনীনতা রক্ষায় অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। তাই স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনালগ্ন থেকে সব ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, শ্রেণি ব্যবধানের ঊর্ধ্বে থেকে সর্বসাধারণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুপ্রবেশ নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। 

কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে মর্মান্তিকভাবে হত্যার পর নীতি-আদর্শহীন ক্ষমতা দখলদার শাসকগোষ্ঠী আবারও ক্ষমতা স্থায়িত্বের কৌশল হিসেবে রাজনীতি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুশাসনে ধর্মকে নিয়ে আসে। দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির বলয়ে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার হীন উদ্দেশ্যে সর্বক্ষেত্রে একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্রীয় নিষ্কৃয়তার সুযোগে ধর্মীয় উপাসনালয়সমূহে ধর্মব্যবসায়ীরা সংগঠিত হতে থাকে এবং কিছু উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অধিকাংশ ধর্মীয় উপাসনালয়ে ধর্ম ব্যবসায়ী সুবিধাভোগী গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। এতে জিম্মি হয়ে পড়ে সাধারণ ও অসহায় ধর্মপ্রাণ মানুষ। সাধারণ মানুষের এই অসহায়ত্বের সুযোগে বিগত কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, এমনকি জাতীয় মসজিদকে ইসলামি লেবাসধারী কিছু সংগঠন মিটিং-মিছিলের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে। 

ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোত্রভেদে সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত রাষ্ট্রে সব ধর্মাবলম্বীর অধিকার রয়েছে স্ব-স্ব ধর্মীয় উপাসনালয়ে। কাজেই, কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলীয় ব্যানারে ধর্মীয় উপাসনালয়ের সর্বজনীনতা প্রশ্নবিদ্ধ করা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ প্রেক্ষিতে পবিত্র মসজিদে সব ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ন্যায্য ও ন্যায়সংগত সমঅধিকার সংরক্ষণে তথা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সর্বজনীনতা রক্ষার দায়িত্ব সরকার ও রাষ্ট্রের। 

পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ভূমি সংস্কার আইনে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ৩৭৫ বিঘা করে। এই আইনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময়ে কোনো গরিব বা অর্থহীন কৃষক এক বিঘা জমিও পায়নি। ওই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের শতকরা ৩৫ জন কৃষক ভূমিহীন হয়ে যান। ৫ থেকে ১৫ বিঘার নিচে ভূমির মালিকানা পায় ৭৮ ভাগ মানুষ। লক্ষ করা গেছে, যাদের ব্যাপক জমি রয়েছে, তাদের অধিকাংশ কৃষিকাজ করে না। যারা কৃষিপণ্য ফলান, তাদের অধিকাংশ ছিল ভূমিহীন। 

এ বৈষম্যের কারণে কৃষি অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের শাসনভার গ্রহণ করে সংবিধানের ৯৮ ধারা বলে মাথাপিছু ভূমির পরিমাণ সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা নির্ধারণ করে উদ্বৃত্ত জমি গরিব ও ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণের উদ্যোগ নেন। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষিজীবীর অস্তিত্ব ও স্বার্থ সংরক্ষণে তিনি কৃষিকে আধুনিকায়নের পাশাপাশি সমবায় ব্যবস্থা গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

 কৃষি ও কৃষক যাতে উচ্চ শ্রেণিভুক্ত ব্যক্তিদের কাছে জিম্মি না হয়ে পড়ে, সে দিকে লক্ষ্য রেখে বঙ্গবন্ধু দেশ পরিচালনায় নীতিনির্ধারণী একাধিক বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমার এই কৃষক শ্রমিক ভাইরা আমাদের খাদ্য জোগায়, বেতন দেয়। তাদেরকে সম্মান দিয়ে কথা বলবেন।’ সময়ের বিবর্তনে আজও বঙ্গবন্ধুর সেই রাজনৈতিক দর্শনই আমাদের পাথেয় হওয়া উচিত। জনগণকে কোনো উচ্চ শ্রেণী বা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হতে দেয়া হলে তা হবে আত্মঘাতী। 

কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, উৎপাদন ব্যবস্থায় ব্যয় বৃদ্ধির ফলে প্রান্তিক দরিদ্র কৃষকদের পক্ষে কৃষি উৎপাদন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অসংগঠিত কৃষককুল কৃষি উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। কৃষকের এই দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যাংক, বিমা, শিল্প-কারখানার উৎপাদনের পাশাপাশি দেশের বড় বড় পুঁজিপতিরা এখন কৃষি যান্ত্রিকীকরণের সুবিধা কাজে লাগিয়ে কৃষিতে ঝুঁকে পড়েছে। তারা কৃষি উৎপাদন ওবণ্টন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিচ্ছে। 

শত শত বিঘা জমির মালিকানা নিয়ে এখন প্রচলিত কৃষির পাশাপাশি অপ্রচলিত কৃষিব্যবস্থাপনা গড়ে তুলছে। বিশেষ করে মৎস্য খামার, পোলট্রি, সবজি, ফলমূল চাষ এবং এসব কেন্দ্রিক শিল্প-কারখানা গড়ে তুলে কৃষিপণ্যের বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। এই অসামঞ্জস্য উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থায় প্রান্তিক কৃষকরা ক্রমেই সংঘবদ্ধ পুঁজিপতি কৃষি বেনিয়াদের কাছে হারিয়ে যাচ্ছে। যা দেশের জন্য এক অশনিসংকেত। 

দেশের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে উচ্চ সুবিধাভোগীদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের ধারাবাহিকায় অতিসম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) ২০২০-এ এক শ্রেণির কারিগরি ঊর্ধ্বতন আমলা তথা ইঞ্জিনিয়ারদের একচ্ছত্র আধিপত্য অব্যাহত রাখার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। জনগণের ক্ষমতার সার্বভৌমত্বের প্রতীক প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের নির্দেশনা এবং সরকারি উচ্চ পর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে দেশের জনগণকে জিম্মি করে কতিপয় উচ্চপর্যায়ের সুবিধাভোগী কারিগরি আমলাদের কোটারী স্বার্থ সংরক্ষণের চক্রান্ত করে যাচ্ছে।

দুর্বৃত্তায়নের ধারাবাহিকতায় দেশের নির্মাণক্ষেত্রেও দেশ ও জনগণকে জিম্মি করার অসৎ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) ২০২০তে ‘ইঞ্জিনিয়ার’-এর সংজ্ঞায় শুধুমাত্র ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারদের ‘ইঞ্জিনিয়ার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা করা হয়েছে। যদিও সরকারের গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির প্রতিবেদনে ইঞ্জিনিয়ার-এর সংজ্ঞায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে : ইঞ্জিনিয়ার দুই ধরনের, তা হলো ‘ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার’। 

সরকারের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রসারের কার্যক্রম বাস্তবায়নে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিএনবিসির যে সব ধারা বা উপধারায় ‘ইঞ্জিনিয়ার’ এবং ‘আর্কিটেক্ট’ শব্দ আছে, তার পূর্বে ডিগি অর্থাৎ ‘ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ার’ ও ‘ডিগ্রি আর্কিটেক্ট’ উল্লেখ করা ন্যায়সংগত।  সার্টিফিকেশন অব ওয়ার্ক-এর ক্ষেত্রে ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ার, ডিগ্রি আর্কিটেক্ট ও প্ল্যানারদের রাখা হয়েছে। কিন্তু ডিপ্লোমা আর্কিটেক্ট ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের রাখা হয়নি। একটি নির্দিষ্ট উচ্চতার ভবনের কনস্ট্রাকশন সার্টিফিকেশন-এর ক্ষেত্রে সার্টিফাইড ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের রাখা বাঞ্ছনীয়। এছাড়া কনস্ট্রাকশন অব অথরিটিতে ডিগ্রি প্রকৌশলীদের সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) এবং ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)’র প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা যুক্তিযুক্ত। 

দেশের সামগ্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং কর্মকাণ্ডের ৮৫ ভাগ কার্যক্রম পরিচালনা করেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা। কেননা, ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাব্যবস্থায় ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা উভয় গ্রুপই চার বছর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা করেন। তারপরও এই সীমাহীন বৈষম্যমূলক আচরণের মাধ্যমে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের রাস্তায় ঠেলে দিয়ে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপপ্রয়াস চলছে কেন? তারপরও ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যবস্থাপনা, প্রশাসন, সমাজব্যবস্থায় একশ্রেণির সুবিধাভোগী সংঘবদ্ধ অপশক্তির নানা অপকৌশল থেকে জনগণকে রক্ষা করে জনসার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রকেই বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। 

জনগণকে জিম্মি করে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর একের পর এক জনস্বার্থবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার ফলে দেশে উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, সমৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে টেকসই উন্নয়নের পথে জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে অবশ্যই সর্বজনীন সুশাসন, পণ্য উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা, সম্পদের সুসম বণ্টন, কর্মনিশ্চয়তা, শ্রমশোষণ রোধ, উৎপাদনব্যবস্থায় জনগণের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনকল্যাণকর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকচর্চা জোরদার করার বিকল্প নেই। 

আর তা করতে হলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও পথনির্দেশনায় দেশের সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কর্মের অধিকার ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে জনকল্যাণকর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনে সরকারকে সুদৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে এবং প্রতিষ্ঠা করতে হবে জনসার্বভৌমত্ব বা রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব। 

লেখক : উন্নয়ন গবেষক ও সভাপতি, আইডিইবি

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর